স্বাক্ষাৎকার
প্রকাশিত : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ২:০৮:৩১
গত ৫ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান যখন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন, তখন একজন এসে জানালেন, শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করছেন। এর আগে সেনাপ্রধন আগে জানতেনই না যে, তিনি দেশ ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নাগরিক টিভির বার্তা প্রধান নাজমুস সাকিবকে টেলিফোনে দেওয়া এক স্বাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
‘আপনার অবস্থান নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন, সেনাবাহিনীর মধ্যে অনেকেই রয়েছেন, যাদের ওই পদে রাখা হচ্ছে কেন, এখনো সরানো হচ্ছে না কেন?’ – এমন প্রশ্নে সেনাপ্রধান বলেন, ‘এ বিষয়ে এনকয়ারি চলছে। এনকয়ারিতে দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনেক বিষয়ই আছে। যেগুলো এনকয়ারি হচ্ছে। এনকয়ারিতে একটু সময় লাগবে। আর প্রমাণ না হলে কারো বিরুদ্ধে কোনো একশন নেওয়া যায় না। এই প্রকৃয়া একটু ধীর গতিতে চলছে। দেখা যাক। আমাদের বেশ কিছু বিষয় আছে যেগুলো করতে হবে।’
সেনাবাহিনীর ব্যারাকে ফেরার বিষয়ে সেনা প্রধান বলেন, ‘আমরা তো ফিরে যেতে চাই। যতটা দ্রুত সম্ভব যেতে চাই। তবে সম্ভবত আমাদের আরো কিছু সময় থাকতে হবে। কারণ পুলিশ এখনো সেই ভাবে দায়িত্ব নেওয়ার অবস্থায় নেই। পুলিশ বাহিনী একেবারে নিস্কৃয় হয়ে গেছিলো। পুলিশ বাহিনী দায়িত্ব নেওয়ার মত হলে আমরা অবশ্য ফেরত চলে যাবো।’
আনসার এবং রিকসা চালকদের কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটাকে আমরা অবশ্যই কাউন্টার কোড করছি। যেমন আরএডি-তে ও এ রকম একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিলো। আমরা বুঝিয়ে তাদের থামতে বলেছি। সবাই কষ্টের মধ্যেই আছে। তারপরও আমাদের ধৈয্য ধরে আস্তে আস্তে এগুলোর সমাধান করতে হবে। আনসারের ওটায় আমরা একশান নিয়েছে। নাইন ডিভিশন কাজ করছে এবং আনসারদের নিবৃত করেছে।
শেখ হাসিনাকে সেইফ এক্সিট দেওয়া ঠিক ছিলো কিনা- নাকি এখানে রেখে বিচার করা উচিত ছিলো? এমন প্রশ্নে সেনা প্রধান বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছিলাম। তখন আমাকে একজন এসে জানালো- তিনি তো চলে যাচ্ছেন। এটা আমি জানতাম না যে, ‘সি ইজ লিভিং দ্য কান্ট্রি’। তারপরও আমি মনে করি থাকলে ওনার লাইফ রিক্স হতে পারতো। ডেফিনেটলি কেউ চাইবে না, একজনের এক্সটা জুডিশিয়াল কিলিং হোক বা সামনে হোক। এগুলো কাম্য না।’
দেশ সংস্কার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি সবাই একসঙ্গে কাজ করলে সংস্কার করা সম্ভব হবে এবং আমরা একটা সুন্দর গণতান্ত্রিক প্রকৃয়ায় যেতে পারবো। ইনশাল্লাহ। আমিও তাদের সঙ্গে আছি। একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। সরকারকে সাহায্য করছি। ইনশাল্লাহ আমরা লক্ষ্যে যাবো। যেতে হবে আমাদের। এখান থেকে ফেরত যাওয়ার আর অবকাশ নেই আমাদের।’
বসুন্ধরা সম্পর্কে নানা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবশ্যই যারা কনসার্ন আছেন। তারা সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
পতিত স্বৈরচারের অনেকেই সচিবালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে রয়েছেন- এমন প্রশ্নে সেনা প্রধান বলেন, আস্তে আস্তে এটাকে ঠিক করতে হবে। যখনই যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী সেই সরকারের সাথে কাজ করে। এর অর্থ এই না যে সবাই স্বৈরচারকে সহায়তা করে। সরকার স্বৈরচার হোক আর যাই হোক কর্মকর্তা কর্মচারীদের তো দৈনন্দিন কাজ করে যেতে হবে। সেই কাজ তারা করেছে। কিছু ভালো করেছেন, কিছু খারাপ করেছে। এভাবে প্যানিক সৃষ্টি করা যাবে না। যারা যারা দোষী তাদের খুঁজে শাস্তি দিতে হবে। প্যানিক সৃষ্টি করলে কেউ কাজ করবে না। সবাই ভয়ে ভীত হবে। এই যে পুলিশের মধ্যে একটা বিশাল ট্রমা। এই ট্রমা থেকে বের করে আনতে হবে। এই জন্য সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে।
সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি দেশবাসীকে ধৈর্য্য ধরার আহবান জানিয়ে বলেন, একটু ধৈয্য ধরতে হবে। অনেক মিস ইনফরমেশন হচ্ছে। আমার দেখা ৯৫ শতাংশই মিথ্যা। সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে এই সংবাদ পরিবেশন করা হয়। মানুষকে একটা ভুল ধারনা দেয়। এই কারণে মানুষের মধ্যে একটা ভুল ধারণার সৃষ্টি হয় । এটা সমীচীন না। তাদের ধৈয্য ধরতে হবে এবং প্রকৃত ঘটনা জানতে হবে।
১৬ বছরের যে জঞ্জাল তা ১৬ মাসেও যদি পরিস্কার করা যায় তাহলেও খুশি হবেন সেনাপ্রধান। এজন্য তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সময় দেওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন।
নাগরিক টিভি/ নাসা/ আসা