প্রকাশিত : ০৯ মার্চ ২০২৫, ১০:২৮:১২
ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার হাতে লাঠি। ‘খুন, ধর্ষণ, নিপীড়ন/রুখে দাঁড়াও জনগণ’, ‘অবিলম্বে ধর্ষকদের/বিচার করো, করতে হবে’, ‘ধর্ষকেরা ধর্ষণ করে/প্রশাসন কী করে?’ সমস্বরে এমন স্লোগান দিচ্ছিলেন তাঁরা। ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনসহ নারীর ওপর একের পর এক সহিংসতার প্রতিবাদে গতকাল রোববার এভাবেই লাঠি নিয়ে মিছিল করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় সময় রোববার রাত আটটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ। রাজু ভাস্করের সামনে এই প্রতিবাদ হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণসহ নারী ও কন্যাশিশুদের ওপর সহিংসতার প্রতিবাদ এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সমাবেশ, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সরকারি-বেসরকারি অন্তত ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব কর্মসূচিতে হাজারো শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন সমাবেশ থেকে ধর্ষণের প্রতিটি ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, ধর্ষণ, নিপীড়নসহ নারীর ওপর সহিংসতার ঘটনা বেড়েই চলেছে; কিন্তু সরকার কার্যত নির্বিকার। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অনেক ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা পার পেয়ে যান। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে হবে। নারীদের জন্য নিরাপদ সমাজ গঠন করতে হবে।
মাগুরায় ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণে জড়িতদের সর্বোচ্চ সাজার দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, নারীর ওপর একের পর সহিংসতা ঠেকাতে ব্যর্থতার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ করতে হবে।
সরকারের ভূমিকানিয়েপ্রশ্ন
ধর্ষণসহ নারীর ওপর সহিংসতার প্রতিবাদে গতকাল দিনভর বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন, মশালমিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে অন্তত ৩৫টি বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে অংশ নেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষও এসব কর্মসূচিতে ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে বিভাগ ও সংগঠনের ব্যানারে পৃথকভাবে এসব কর্মসূচি পালিত হয়। ধর্ষকদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রীরা। তাঁরা স্লোগান তোলেন ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’।
প্রতিবাদ না করা পর্যন্ত ধর্ষকদের কেন বিচার শুরু হয় না—সে প্রশ্ন তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, ধর্ষকদের শাস্তির ব্যবস্থা কেন করতে পারছে না অন্তর্বর্তী সরকার?
বিভিন্ন সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ধর্ষণ ও সহিংসতার শিকার সবার পাশে তাঁরা আছেন। ন্যায়বিচারের জন্য তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ চলবে।
বেলা তিনটার দিকে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’–এর ব্যানারে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে লাঠিমিছিল শুরু হয়। এই মিছিল ভিসি চত্বর, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, শাহবাগ মোড় ঘুরে আবার রাজু ভাস্কর্যে ফিরে আসে। মিছিলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মীরা অংশ নেন। পরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তাঁরা। এই সমাবেশ থেকে ধর্ষণসহ নারী নিপীড়ন প্রতিরোধে ‘ব্যর্থ’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সব ধর্ষণের ঘটনার বিচারসহ ৯ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া লেখক নিগার সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, প্রতীকী প্রতিবাদ জানাতে লাঠি নিয়ে এসেছেন। শিশু, নারীসহ প্রত্যেকের নিরাপত্তা চান তাঁরা।
দিনভর বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সমাবেশের পর রাতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে মশালমিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এই মিছিল ভিসি চত্বর ও শাহবাগ মোড় হয়ে আবার রাজু ভাস্কর্যে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সমাবেশে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রুবিনা আক্তার বলেন, ‘এই রাষ্ট্রে একটা তিন বছরের বাচ্চাও সেইফ (নিরাপদ) না, নব্বই বছরের বৃদ্ধাও সেইফ না, আমার মা–বোনেরা আজ পাবলিক ট্রান্সপোর্টে (গণপরিবহন) সেইফ না, তারা কোথাও সেইফ না। একজন মুনিয়া, একজন আছিয়া—এরা প্রতীকী, এদের বিচার করার পর বাকিদের বিচার করতে হবে।’
রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’ থেকে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মুখপাত্র আশরেফা খাতুন। পাঁচ দফার মধ্যে মাগুরায় শিশু ধর্ষণের ঘটনার বিচার এক মাসের মধ্যে শেষ করার দাবি জানানো হয়।
এইচএস