বিএনপি
প্রকাশিত : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১:২৮:০৮
‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত’ বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার দুর্গা পূজার ষষ্ঠীতে ঢাকার ঢাকেশ্বরী কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপে গিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বিএনপির মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘‘ পরিবর্তনের সুযোগ আমাদের সকলকে নিতে হবে। এই দেশটা কারো একার নয়। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলামৃ সেই স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম তার যে মূল চেতনা ছিলো বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই একটা সম্প্রদায়িক, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র একটা সমাজ নির্মাণ করব। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।”
‘‘ আমি আজকে এখানে এসেছি.. আমি আমার দলের পক্ষ থেকে, দলের চেয়াপারসনের পক্ষ থেকে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছিৃ.এই শারদীয় দূর্গা পূজা আপনাদের জীবনে অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসুক, একটা সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করুক, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই একটা সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুকৃ এই কামনা করছি, এই প্রত্যাশা করছি।”
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীর সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গাপূজা। বুধবার ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া দূর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম দিনে সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামন্ডপে আসেন বিএনপি মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
আরো পড়ুন: পোষাক শিল্পে অস্থিরতা পরিকল্পিত চক্রান্ত
ঢাকেশ্বরী পূজা মণ্ডপে পৌঁছালে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মাসহ পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ বিএনপি মহাসচিবকে স্বাগত জানান। মন্দিরে প্রবেশ করে মির্জা ফখরুল পূজামন্ডপে পরিদর্শন করেন এবং আগত পূর্ণার্থীদের শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, ‘‘ যে দেবীর আপনারা আরাধনা করছেন যাকে আপনারা মা দূর্গা বলেন এবং এই দেবীর আর্বিভাব হয়েছিলো অসুরকে বদ করার জন্যে, অন্যায়কে দূর করার জন্যে এবং মানুষে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধুত্ব সৌহার্দ প্রতিষ্ঠার জন্যে। হিংসা-প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা দূর করে ভালোবাসা প্রেমের সমাজ নির্মাণ করার জন্যে।”
‘‘ আজকে সেই সুযোগ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। আমরা ভয়াবহ দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করে সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি যেখানে আমাদের একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মান করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে আমাদের মধ্যে কোনো ভেদ থাকবে না, ভেদাভেদ থাকবে না, ধর্মান্ধতা থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। এক বর্ণের সাথে আরেক বর্ণের কোনো প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা বা ঘৃণার কোনো রাজনীতি থাকবে না।”
আরো পড়ুন: কুটনৈতিক তৎপরতা বাড়াছে বিএনপি
সাবেক প্রধান মন্ত্রী খালেদা জিয়ার শাসনামলে ঢাকার মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেনসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনারা যে ৮ দফার কথা বলেছেন সেই ৮ দফা আমরা বিবেচনা করছি, এর যে মূল বিষয়টি সেটার প্রতি আমাদের সর্বাত্মক যে সহানুভূতি সেটা আমাদের রয়েছে। আমরা আপনাদের এটুকু বলতে পারি, অতীতে যেমন আমরা আপনাদের প্রতিটি সমস্যায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছি ঠিক একইভাবে আগামীতেও আপনাদের সঙ্গে থাকব।”
তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য একটি রাজনৈতিক দল আমি নাম বলতে চাই না তারা বরাবরই বলে থাকে তারাই নাকি এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ত্রাণ কর্তা। কিন্তু আপনারা যদি দেখেন অতীতে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার নেতৃত্বে কিন্তু তাদের লোকেরাই সেখানে ছিলো এবং বাংলাদেশে আপনাদের সস্প্রদায়ের মানুষের যত জমি-জমা, সম্পত্তি দখল করে নেয়া হয়েছে তার মূলেও তারা ছিল।
আরো পড়ুন: আওয়ামী লীগের ফিরে আসার সুযোগ নেই: দুদু
‘‘ আমরা এই কথাটা বলতে পারি আগামীতে আমাদের যখন প্রতিষ্ঠিত হবে, আপনারা জানেন এটা আমাদের সরকার নয়, এটা একটা অন্তবর্তীকালীন সরকার। আমাদের সরকার আসলে প্রতিটি ঘটনার আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করবই।”
৮ দফা দাবি তুলে ধরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, ‘‘ আমাদের ওপর যেসব অন্যায় হয়েছে, নির্যাতন হয়েছে আমরা তার ন্যায় বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমরা আশা করি আপনি আমাদের সাথে থাকবেন, আপনার দল আমাদের সাথে থাকবে। কেনো আশা করি? ৫ আগস্টের পরেও আপনার দলের নেতা-কর্মীরা আমাদের মন্দির পাহারায় ছিলেন, আমাদের বাড়িঘর পাহারায় ছিলেন। সেজন্য আজকের দিনে কৃতজ্ঞা জানাচ্ছি।”
‘‘ আপনার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং আপনার নির্দেশে সারা বাংলাদেশে পূজা কমিটির টিম সাথে আপনাদের নেতৃবৃন্দ সাংগঠনিকভাবে আলাপ-আলোচনা করেছেন। পূজায় আমাদের নিরাপত্তার কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে আমরা প্রত্যাশা করি, আমাদের ৮ দফা এবং আমাদের ন্যায় বিচারের দাবির সাথে পাশে থাকবেন ও একাত্মতা ঘোষণা করবেন। আরেকটা কথা বলতে চাই, আমাদের জন্ম এদেশে, আমরা এদেশের সন্তান। আমরা এই দেশে সকল নাগরিক অধিকার নিয়ে, ন্যায়ের অধিকার নিয়ে, সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে বসবাস করতে চাই। আপনারা অতীতেও আমাদের পাশে ছিলেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন এই প্রত্যাশা করি।”মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব দূর্গা পূজার প্রথম দিনে ষষ্ঠীতে ঢাকেশ্বরী পূজা মন্ডপে আসার জন্য বিএনপি মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান।
নাগরিক টিভি/ আসা